Description
১৮৫৭ সিপাহি বিপ্লবের ইতিবৃত্ত
এ কথা অনস্বীকার্য যে, ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ মহাবিদ্রোহ নামে স্থান পেয়েছে। সে সময় অসংখ্য নাম-পরিচয়হীন সাধারণ মানুষ নিজেদের জীবন তুচ্ছ করে শক্তিশালী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে শামিল হয়েছিল—সে স্মৃতি আজও ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান তথা উপমহাদেশের অধিবাসীদের মনকে নাড়া দেয়।
আত্মত্যাগ, বীরত্ব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চিরকালই সম্ভ্রম আদায় করে এসেছে। তাই ১৮৫৭ সালের বিপ্লবীদের সম্পর্কে উপমহাদেশবাসীর এই শ্রদ্ধাভাব অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া, উপমহাদেশব্যাপী অভূতপূর্ব এই উথালপাথালের দ্বিতীয় কোনো নজিরও ভারতের পরবর্তীকালের ইতিহাসে খুব একটা পাওয়া যায় না। অন্যদিকে ওই বছরের ঘটনাবলি ঐতিহাসিকদেরও অনেক ভাবিয়েছে আর এখনো ভাবায়।ঈশা খাঁ
৩রা মার্চ, ১৫৭৫।
তুকারয়ের ময়দানে প্রানপণ লড়াই শেষে মুঘল আর বাঙ্গালী সালতানাত দুই পক্ষই বিদ্ধস্ত। ক্লান্তি আর ধ্বংসযজ্ঞে কার ক্ষতি বেশি সে হিসাব কষে কার সাধ্যি! তবে বাঙ্গালাহর সেনাপতি গুজর খান নিহত, আহত জুনায়েদ কররানি মালাকুল মউতের অপেক্ষায় আর সুলতান দাউদ কররানি পলাতক। তাই রক্তাক্ত শমসের আর হাজার বছরের পরম্পরার ফয়সালা—বাংলা-বিহার আজ থেকে বাদশাহ আকবরের অধিকার। সে অধিকার ফলানোর জন্য এখন শুধু দখল দেওয়া বাকি!
নদী-চর-খাল-বিল আর জলা-জঙ্গলে জড়ানো এই বাংলার দখল নেওয়ার একমাত্র উপায় হলো নৌকা। তাই শত শত রণকোষা আর জাহাজ সাজিয়ে হাজির হলো সুবিশাল নৌবহর—মুঘলদের ‘বাদশাহি নাওয়ারা’। সুলতান স্বেচ্ছায় দাবি ছেড়ে দেওয়ায় দখলের কাজটা হওয়ার কথা ছিল রীতিমতো জলবৎ তরলং! কিন্তু নাওয়ারার প্রধান সেনাপতি ‘মির বহর’ শাহ বরদি শীঘ্রই টের পেলেন, বাংলার জল-হাওয়া আর যাই হোক, সরল-সোজা কোনো বস্তু নয়।
গভীর ব্রহ্মপুত্রের কালচে সবুজ জলে সে বিশাল সাম্রাজ্যবাদী নাওয়ারার পথ আটকে দাঁড়ালেন সরাইল পরগনার ক্ষুদ্র জমিদার। শুরু হলো অসমসাহসী সেই বাঙালি ভূঁইয়ার উত্থান। জন্ম নিল এমন এক কিংবদন্তি, যার সামনে ম্লান হয়ে যায় রূপকথার হাজারো ডালিমকুমার।
নাম তার ঈশা খাঁ। লোকে ডাকত মসনদ-ই-আলা। আর সেই গল্প সাজিয়ে নিয়েই উপন্যাসের প্রথম কিস্তি, এক যে ছিল বাঙ্গালাহ-১—ঈশা খাঁ।খিলজি শাসন
খিলজি রাজবংশ ছিল তুর্কি-আফগান বংশোদ্ভূত মুসলিম রাজবংশ। ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে এই রাজবংশ ভারত উপমহাদেশের বিরাট অংশ শাসন করে। ১২৯০ সালে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণের মাধ্যমে এই রাজবংশের পত্তন করেন সুলতান জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি। তিনি ছিলেন অত্যন্ত নরম মেজাজের শাসক। তার মৃত্যুর পর ১২৯৬ সালে সালতানাতের শাসনভার গ্রহণ করেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি। তিনি ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ শাসক। সিংহাসনে আরোহণ করেই সুলতান আলাউদ্দিন মনোনিবেশ করেন রাজ্যের সীমানা বিস্তৃত করতে। এজন্য তিনি পরিচালনা করেন বহু যুদ্ধাভিযান। এসব যুদ্ধের মাধ্যমে একের পর এক অঞ্চল বিজিত হতে থাকে। একইসাথে হস্তগত হতে থাকে প্রচুর ধন-সম্পদ, যা তার রাজ্যকে করে তোলে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। তিনি একজন দক্ষ সেনাপতি হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন অভিজ্ঞ শাসক ও রাজনীতিবিদ। তিনি তার রাজ্যের জন্য অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেন, করব্যবস্থার সংস্কার করেন, চিরতরে বন্ধ করেন বিদ্রোহের পথ। তার শাসনামল ছিল শক্তি, ন্যায় ও সমৃদ্ধির। তিনি ইন্তেকাল করেন ১৩১৬ সালে।
সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির পর কিছুদিন শাসন করেন তার ক্রীতদাস মালিক কাফুর। তারপর সিংহাসনে আরোহণ করেন আলাউদ্দিনের ছেলে সুলতান কুতুবউদ্দিন মোবারক শাহ খিলজি। তিনি রাজ্য পরিচালনায় অনেকটা সহজতার নীতি অবলম্বন করেন। তিনি নিহত হন খসরু খানের হাতে। এরপর খসরু খানের হাত থেকে দিল্লি সালতানাত চলে যায় তুঘলকদের কাছে। এভাবেই শেষ হয় খিলজি শাসন।ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান
ব্রিটিশদের দুই শ বছরের গোলামির জিঞ্জির থেকে মুক্তির জন্য ভারতবর্ষে যুগপৎ যে আজাদি আন্দোলন অব্যাহত ছিল,এর অন্যতম পুরোধা ছিলেন উপমহাদেশের মুসলমানরা। আঠারো শতকের গোড়ার দিকে আলেমরাই প্রথম ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। কিন্তু বেদনাদায়ক সত্য হলো,আজ ইতিহাসের পাতায়,সভা ও মঞ্চে মুসলমানদের সেই ত্যাগের কথা অনুচ্চারিতই রয়ে যায়। কেবল তাই নয়,বরং বইপত্র-সিনেমায় মুসলমানদের দেখানো হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি হিসেবে। ‘ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুসলমানদের অবদান’ বইটি সেই অমিয় সত্যকে ধারণ করেছে; যা দুই শ বছরে ভারতবর্ষের ইতিহাসে ঘটেছে। তুলে ধরা হয়েছে আজাদি আন্দোলনের সেসব দিক। নিজেদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং এই ভূমিতে মুসলমানদের বিস্তৃত শেকড় অনুসন্ধানের জন্য বইটির পাঠ অপরিহার্য।হিন্দুস্তান
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ব্রিটিশদের আগমনের পূর্বে হিন্দুস্তান ছিল পৃথিবীর শীর্ষ ধনী দেশ। পুরো হিন্দুস্তানে প্রচলিত ছিল এক হাজারেরও বেশি মুদ্রা। হিন্দুস্তানের জিডিপি ছিল পুরো পৃথিবীর দুই তৃতীয়াংশ। স্যার থমাস মুনরো, উইলিয়াম বেন্টিংক, লর্ড ম্যাকলে-সহ অনেক ইংরেজ ঐতিহাসিক স্বীকার করেছেন—ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব হিন্দুস্তানের সম্পদের কল্যাণেই অস্তিত্ব এসেছে। কেমন ছিল বিখ্যাত সেই হিন্দুস্থানের শিল্পব্যবস্থা? কত উন্নত ছিল হিন্দুস্তানের আর্থিক খাত? কিভাবেই বা হাতেগোনা কিছু মানুষ হিন্দুস্তানকে গড়ে তুলল এক সমৃদ্ধ সাম্রাজ্য হিসেবে? বিপ্লবী একটি জাতি কীভাবেই-বা পরিচিত হলো পৃথিবীর দরিদ্রতম, কাঙাল ও ক্ষুধার্ত জাতি হিসেবে? কীভাবেই-বা একটি দেশকে লুটপাট করে ঘটানো হলো ব্রিটেনের শিল্পবিপ্লব? গড়ে তোলা হলো মিল-ফ্যাক্টরি, কল-কারখানা ও সভ্যতার ধ্বজাধারীদের বিশাল সাম্রাজ্য?বঙ্গবিজেতা বখতিয়ার
বাংলার মুসলিম শাসনের ইতিহাসের সূচনা হয় প্রবল আত্মবিশ্বাসী একজন যুবকের নাম উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। তিনি পৃথিবীবিখ্যাত বিজয়ী জাতি তুর্কি বংশোদ্ভূত বখতিয়ার খলজি। ইতিহাস যাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে প্রাথমিক জীবনের ছন্নছাড়া এক যুবক হিসেবে। বর্তমান আফগান থেকে তিনি শুরু করেন স্বপ্নের যাত্রা। সুলতান মুহাম্মাদ ঘুরির দরবারে চাকরিতে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ছুটে আসেন দিল্লির শাসক কুতুব আইবেকের নিকট। এখানেও প্রত্যাখ্যাত হন। বারবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরও দমে যাননি। জীবনযুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখে একটা পর্যায়ে এসে সফলতা অর্জন করেন। সাধারণ সেনার চাকরিজীবন থেকে ক্রমান্বয়ে বিশাল এক অঞ্চলের শাসকে পরিণত হন। অধিকার করেন বিহার ও বিস্তৃত বাংলাভূমি। তারপরও অভিযানযাত্রা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যান তিব্বতের দিকে।
Reviews
There are no reviews yet.